নিউজ ডেক্সঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। শাহাদত হোসেনকে আহবায়ক এবং জুনেদ মিয়া, আব্দুল হাকিম রাজ, সুধেন্দু দাশ অমল,দেবাশীষ দাসকে যুগ্ন-আহবায়ক করে, রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজাদ মিয়া চৌধুরী(ঈমানী মিয়া) ও সাধারন সম্পাদক মিলন বখত স্বাক্ষরিত এ কমিটি গত ২৩ মার্চ অনুমোদন করা হয়।
দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে গ্রুপিং সহ নানা কোন্দল বিরাজমান ছিল। এর কারন হিসেবে জানা যায়, রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম মিছবাহুদ্দোজ্জা ভেলাই ও সাবেক সাধারন সম্পাদক মরহুম আছকির খাঁন রাজনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে ফতেপুর ইউনিয়নে সভাপতি- সেক্রেটারীর আলাদা আলাদা স্বাক্ষরে আওয়ামী লীগের দুইটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয় হয়।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম মিছবাহুদ্দোজ্জা ভেলাই স্বাক্ষরিত কমিটির সভাপতি ছিলেন মরহুম ইছমাইল হোসেন মেম্বার এবং সাধারন সম্পাদক ছিলেন মরহুম আবুল হোসেন মেম্বার। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আছকির খাঁন স্বাক্ষরিত কমিটির সভাপতি ছিলেন, আলহাজ্ব আব্দুল কাহির চৌধুরী বাবু এবং সাধারন সম্পাদক ছিলেন মরহুম আবুল হোসেন মেম্বার।দুই কমিটিতে সাধারন সম্পাদক হিসেবে একজনের নাম থাকলেও সভাপতির নাম ছিল ভিন্ন ভিন্ন।ফলে মরহুম আবুল হোসেন মেম্বার দুই কমিটির সভাপতিকে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন অনুষ্টান সহ দলীয় সভা-সমাবেশ করতে দেখা গেছে।দুই সভাপতির কর্মী সমর্থকরাও তখন থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা সভা-সমাবেশ চালু করে। এরপর ফতেপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, জেলা সদরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা বাবু নকুল চন্দ্র দাশ। নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করার ফলে সে সময় ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি আব্দুল কাহির চৌধুরী বাবু মেম্বারের বলয় নকুল বাবুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার করে। নির্বাচনী ফলাফলে নকুল চন্দ্র দাশ বিজয়ী হবার পর নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ নিয়ে বাবু মেম্বার বলয়ের রাখাল চন্দ্র দাশ, সুধেন্দু দাশ অমল সহ কয়েকজনের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশের দুরত্ব বাড়ে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি মরহুম ইছমাইল মেম্বারের মৃত্যুর পর তার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দাবী করে আওয়ামী লীগ নেতা ফজর আলী রাখাল চন্দ্র দাশ,সুধেন্দু দাশ অমল,জুনেদ মিয়া সহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে আলাদা সভা-সমাবেশ শুরু করেন। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ ইউনিয়ন পরিষদের ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসুচি সহ সভা-সমাবেশ শুরু করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটা অংশ ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যানের সাথে সভা-সমাবেশে যোগ দেয়। ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ এসব সভা-সমাবেশে বাবু মেম্বার তথা ফজর আলী বলয়ের নেতা-কর্মীদের দাওয়াত দিতে শুনা গেলেও ফজর আলী বলয়ের নেতা-কর্মীরা ইউপি চেয়ারম্যানের সভা-সমাবেশে রিতিমত এড়িয়ে চলে। মাঝে-মধ্যে বাবু মেম্বার সাহেব ইউপি চেয়ারম্যানের সভা-সমাবেশে উপস্থিত হলেও কখনো কখনো তাদের মধ্যে ও নানা বিরোধের গুঞ্জন এলাকার লোক মুখে প্রকাশ পায়। এর মধ্যে মৃত্যু বরণ করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই কমিটির সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন মেম্বার। তার মৃত্যুর পর ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যত অভিবাভকহীন হয়ে পড়ে। রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের পুর্নাঙ্ঘ কমিটি ঘোষনার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের হালচাল আলোচনায় আসে। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে উদ্যেগ নেয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের মাধ্যমে ফতেপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে একটি শৃংখলার মধ্যে নিয়ে আসার। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ মার্চ ফতেপুর ইউনিয়ন অফিস প্রাঙ্গনে কর্মী সমাবেশ ও ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুয়িব মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের জননন্দিত সাধারন সম্পাদক,মনসুর নগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক বদরুল ইসলাম বদরু, সাহেদ্দুজ্জামান আনসারী মনাই, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক সেলিম, সামসুদ্দোহা রুকন, ফরজান আহমদ, মুহিবুর রহমান সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভায় প্রথম অধিবেশন সমাপ্তির পর বাদ মাগরিব শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। এ অধিবেশনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ফতেপুর ইউনিয়নে একটি আহবায়ক কমিটি দেওয়ার ঘোষনা দিলে আহবায়ক পদে মঈনুদ্দিন মেম্বার, জহুর উদ্দিন, কদ্দুছ মাষ্টার, ফজর আলী, শাহাদত হোসেন, তরুন মেম্বার সহ ৭ জন প্রার্থী হন।এদিকে যুগ্ন-আহবায়ক পদে জুনেদ মিয়া, আব্দুল হাকিম রাজ, খালেদ মাসুদ সাজু, মজিদ মিয়া, শেখ রেজান মিয়া, মিছবাহ উদ্দিন, সুধেন্দু দাশ অমল, দেবাশীষ দাস, অপরেশ দাশ অপু,রাখাল চন্দ্র দাশ সহ ১৩ জন প্রার্থী হন। প্রত্যেক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক কমিটির ঘোষনা না করে এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি ঘোষনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করে চলে যান। গত ২৩ মার্চ রাত ১০ টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মিলন বখতের ফেইসবুক আইডি থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় প্যাডে শাহাদত হোসেনকে আহবায়ক এবং জুনেদ মিয়া, আব্দুল হাকিম রাজ, সুধেন্দু দাশ অমল,দেবাশীষ দাসকে যুগ্ন-আহবায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। উক্ত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় চলছে আনন্দের বন্যা। দলমত নির্বিশেষে এলাকার সাধারন মানুষজন সহ আওয়ামী লীগের অঙ্ঘসঙ্ঘঠনের নেতা-কর্মীরা ত্যাগি ও কর্মী বান্ধব নেতাদের মুল্যায়ন করে এ রকম একটি কমিটি উপহার দেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজাদ মিয়া চৌধুরী(ঈমানী মিয়া) ও সাধারন সম্পাদক মিলন বখত সহ সকল নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন।
Leave a Reply